রবিবার, ২৭ মে, ২০১২

সংলাপ কেন জরুরি



তা রে ক  শা ম সু র  রে হ মা ন
দেশে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি এখনও দেড় বছর। কিন্তু এরই মধ্যে রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে অনেক ঘটনা ঘটেছে একের পর এক, যা রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও অস্থির করে তুলেছে। সাবেক রেলমন্ত্রী ও বর্তমান দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএসের গাড়িতে গভীর রাতে ৭০ লাখ টাকা পাওয়ার ঘটনা এবং ঘটনার রেশ ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই ‘গুম’ হলেন বিএনপির মাঝ সারির এক নেতা। এর প্রতিবাদে বিএনপি তথা ১৮ দল হরতাল করল পাঁচ দিন। ১৭ এপ্রিল ইলিয়াস ‘গুম’ হয়ে যাওয়ার এক মাস পার হয়ে গেছে অনেক আগেই। তার পরও গত ২২ মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন তিনি আশাবাদী ইলিয়াস আলীকে খুঁজে পাওয়া যাবেই। অথচ ইলিয়াস আলীর অন্তর্ধান নিয়ে অনেক লঙ্কাকাণ্ড ঘটে গেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো ৩৩ শীর্ষস্থানীয় নেতাকে প্রধানমন্ত্রীর অফিসের সম্মুখে গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করে মামলা হল। তাদের জামিন প্রত্যাখ্যান করা হল নিম্ন আদালতে। এ ঘটনার রেশ ধরে আদালত ভাঙচুর করার অভিযোগে একশ’ আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। রাজনীতি বোঝার জন্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকের প্রয়োজন নেই। একজন সাধারণ মানুষও বোঝেন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভালো নয়। মূলত একটি বিষয়কে কেন্দ্র করেই রাজনীতি উত্তপ্ত হচ্ছে আর তা হচ্ছে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোন সরকারের আওতায় অনুষ্ঠিত হবে এবং এটা নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে পরস্পর বিপরীতমুখী একটি অবস্থান। সংবিধান অনুসরণ করে সরকার যেখানে বলছে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রেখেই, সেখানে বিরোধী দলের দাবি একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এ নিয়ে জট খুলছে না। এ ক্ষেত্রে বিদেশি শক্তিগুলোর একধরনের ‘হস্তক্ষেপ’ও আমরা লক্ষ করছি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা ঘুরে গেলেন ক’দিন আগে। তিনি বলে গেলেন, একটি নিরপেক্ষ সরকার ও সকল দলের অংশগ্রহণের নির্বাচনই চায় যুক্তরাষ্ট্র। একই কথার প্রতিধ্বনি করলেন ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতও। হিলারি ক্লিনটন আরও একটি কথা ঢাকায় বলে গিয়েছিলেন আর তা হচ্ছে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে একটি সংলাপ। এটাই হচ্ছে মোদ্দাকথা। সঙ্কট নিরসনে এই মুহূর্তে সংলাপ জরুরি। কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে, তা সংলাপের মাধ্যমে নির্ধারণ করা সম্ভব। সংবিধান ইতোমধ্যে সংশোধিত হয়েছে। সংবিধানে এই মুহূর্তে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বলে কিছু নেই। তবে আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনের ব্যাপারে একটি পদ্ধতি বের করা সম্ভব। ওই পদ্ধতিকে যে-কোনো নামে অভিহিত করা যায়। শুধু যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে তার কোনো মানে নেই। নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার স্বার্থে বিএনপি তথা ১৮ দল চাচ্ছে সরকার সংবিধান সংশোধন করুক।
এ ক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধন না-করেও সংসদে গৃহীত একটি সিদ্ধান্তের মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। এখানে বিভিন্ন ‘ফর্মুলা’ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। আমার ধারণা, মহাজোটের শরিকরাও চায় আগামী নির্বাচন হোক একটি নিরপেক্ষ সরকারের আওতায়। এই নিরপেক্ষ সরকারের কাঠামো কী হবে, এটা নিয়েই ‘সংলাপ’ জরুরি। বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রেখে, সংসদ সদস্যদের নিজেদের ‘পদ’ বজায় রেখে (যা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে) যে নির্বাচন, সেই নির্বাচনের কোনো গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না। সরকার ভালো করবে যদি বিরোধী দলসহ সকল দলের সঙ্গে একটা ‘সংলাপ’ শুরু করে। এতে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়বে। হিলারি হরতাল না করার আহ্বান জানিয়ে গেছেন। হরতাল এ দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটি অংশ। অতীতেও হরতাল হয়েছে। বিরোধী দল হরতাল আহ্বান করে তাদের দাবিদাওয়া আদায়ের জন্য। তবে সব ক্ষেত্রে দাবিদাওয়া আদায় হয় না। সাম্প্রতিক সময়ের যে হরতাল, সেই হরতালের পেছনে যুক্তি আছে। ইলিয়াস আলীকে কে বা কারা ‘গুম’ করল রাষ্ট্র তা জানবে না তা হতে পারে না। বিএনপি এই ইস্যুতে হরতাল করেছে। হরতাল পালন করার মধ্য দিয়ে ইলিয়াস আলী ফিরে আসেননি। এটা দুঃখজনক। তবে এই ইস্যুতে হরতাল দেওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে সরকারের ওপর প্রত্যক্ষ চাপ সৃষ্টি করা। হরতালে দেশের ক্ষতি হয়। ব্যবসায়ীরা তো ক্ষতিগ্রস্ত হনই, সবচেয়ে বড় কথা বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগকারীরা কিংবা আরএমজির ক্রেতারা বাংলাদেশের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেন। সরকারের এটা বোঝা উচিত কেন বিরোধী দল হরতাল দেয়। সেই ‘পরিস্থিতি’ যাতে সৃষ্টি না-হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা প্রয়োজন। আরও একটা কথা, ইলিয়াস আলীর পাশাপাশি শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামের অন্তর্ধান (পরবর্তীতে হত্যা) রহস্য উন্মোচন হওয়াও প্রয়োজন। এটা কি কোনো রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড? জনপ্রিয় একজন শ্রমিক নেতার মৃত্যু ‘ভুল সিগন্যাল’ পৌঁছে দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানকার লেবার অর্গানাইজেশন অত্যন্ত শক্তিশালী। তারা বাংলাদেশি তৈরি পোশাক বয়কটের ডাক দিতে পারে। আমরা যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দাবি করছি, সেখানে এই হত্যাকাণ্ড ও এর বিচার না-হওয়া বাংলাদেশের জন্য বড় ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। আমাদের তৈরি পোশাকের স্বার্থেই আমিনুল হত্যাকাণ্ডের বিচার হওয়া উচিত। এদিকে গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে হিলারি ক্লিনটনের একটি মন্তব্যের যে প্রতিক্রিয়া অর্থমন্ত্রী দেখিয়েছেন, তা শোভন নয়। তার জবাব ভদ্রজনোচিত হওয়া উচিত ছিল। এখানে রাগ দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। ব্যক্তি ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনায় কী করেছেন, সেটা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু বাস্তব সত্য হচ্ছে বিশ্বজুড়েই ড. ইউনূসের অনেক ‘বন্ধু’ রয়েছেন। ড. ইউনূসের অপসারণের ঘটনায় তারা আহত হয়েছেন। গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনায় কোনো একটি ক্ষেত্রে তাকে রাখা গেলে ক্ষতি কী? তিনি নিশ্চয়ই এখন আর আগের মতো গ্রামীণ ব্যাংকে প্রভাব খাটাতে পারবেন না। সরকার এই বিষয়টি ভেবে দেখলে ভালো করবে। এমসিএ বা মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ অ্যাকাউন্টস থেকে আমরা সহায়তা পাচ্ছি না। বড় বাধা আমাদের দুর্নীতি। এই দুর্নীতি আমরা রোধ করতে পারছি না। পদ্মা সেতু নির্মাণে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। ঢাকা শহরে এসে জাপানি উপ-প্রধানমন্ত্রীও বলে গেলেন বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সমস্যা মিটিয়ে ফেলার কথা। বিএনপিও বলছে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বিরোধ মিটিয়ে বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ নিতে। বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের বড় বিনিয়োগ রয়েছে। আমাদের স্বার্থেই আমাদের বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বিরোধ মিটিয়ে ফেলা উচিত। হিলারি ক্লিনটন মূলত এ কথাগুলোই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বলে গেছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না এই বিষয়গুলো আগামী নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে। এ ক্ষেত্রে একটি নিরপেক্ষ সরকার না-হলে কোনোভাবেই সাধারণ মানুষের মনোভাব প্রতিফলিত হবে না। সাধারণ মানুষের মনোভাব বুঝতে হলে তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। হিলারি ক্লিনটনের মতো ব্যক্তিত্ব ঢাকায় এসে এ কথাটাই আমাদের বলে গেছেন। সরকার যদি এটা উপলব্ধি করতে না-পারে, তাহলে ভুল করবে। আমাদের কাছে প্রচুর দৃষ্টান্ত রয়েছে, যেখানে জাতির বৃহত্তর স্বার্থের খাতিরে সরকার এমন সব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা সংবিধানসম্মত ছিল না। যেমন ২০০৮ সালে কেনিয়া ও জিম্বাবুয়ের কথা আমরা রাখতে পারি। এই দুটো দেশে প্রধানমন্ত্রীর কোনো পদ ছিল না সংবিধানে। কিন্তু রাজনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলায় ২০০৮ সালে প্রেসিডেন্ট মুগাবে (জিম্বাবুয়ে) সাভাঙ্গিরাইকে প্রধানমন্ত্রী ও কেনিয়াতে প্রেসিডেন্ট কিবাকি বিরোধী দলনেতা অডিংগাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিতে বাধ্য হন। আজ গ্রিসের সঙ্গে সঙ্গে আমরা পাকিস্তানের দৃষ্টান্তও দিতে পারি। সাম্প্রতিককালে পাকিস্তানের সংসদেও একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন আয়োজন করার। আমরা চাই দেশে তত্ত্বাবধায়ক তথা নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার একটা ঘোষণা সরকার দিক। এর মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা হ্রাস করা সম্ভব। গ্রিস আমাদের জন্য একটা উদাহরণ। বাংলাদেশের পেক্ষাপটে আমরা এই উদাহরণটা অনুসরণ করতে পারি। গ্রিসের মতো একটি গণতান্ত্রিক দেশেও তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা মেনে নিয়েছে। আসলে মূল বিষয়টি হচ্ছে সংবিধানই সবকিছু নয়। প্রয়োজনে জাতির স্বার্থে সংবিধানের বাইরে গিয়েও কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। আমাদের রাজনীতিবিদরা গ্রিস বা কেনিয়ার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করবেন কি না, সেটাই দেখার বিষয় এখন। তবে একটি আশার কথা শুনিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি গেল বুধবার বলেছেন সংলাপ হবে, তবে তা তত্ত্বাবধায়ক সরকার কাঠামো নিয়ে নয়। মহাজোটের অন্যতম শরিক জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুও ইঙ্গিত দিয়েছেন একটি নিরপেক্ষ সরকারের কাঠামো নিয়ে মহাজোটের মাঝে আলোচনা হচ্ছে। এর অর্থ হচ্ছে পরিষ্কার। সরকার একটু নমনীয় অবস্থান নিয়েছে। এটা নিশ্চয়ই অনেকেই স্বীকার করবেন যে, ২০০৮ সালের যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সেই সরকারের অনেক অনিয়ম, বিশেষ করে তত্কালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের বিতর্কিত ভূমিকা গোটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকেই একটি প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছিল। সে ধরনের একটি সরকার কেউই চাইবে না। তবে একটি নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, সেই নিরপেক্ষ সরকারের কাঠামো কী হবে, সেটা নিয়েই সংলাপ হতে পারে। এখানে বিভিন্ন ফর্মুলা নিয়ে মতবিনিময় হতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত একটি মতের ব্যাপারে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারি। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আরও একটি অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। আর তা হচ্ছে সেই পুরনো ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’। যদিও এ ব্যাপারে আমরা বিস্তারিত জানি না। তবে নিঃসন্দেহে অভিযোগটি গুরুতর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে অবিসংবাদিত দুই শক্তি। এদের বাদ দিয়ে গণতন্ত্র বিকশিত হবে না। এদের রেখেই গণতন্ত্রকে আরও উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে।
সংলাপ হোক। সংলাপের এজেন্ডা হওয়া উচিত একটাই-নিরপেক্ষ সরকারের কাঠামো। তার আগে দুটি বড় দলের মধ্যে অর্থাত্ সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা স্থাপন করা খুব জরুরি। সরকারকেই এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা চাই রাজনীতি তার নিজস্ব নিয়মে এগিয়ে যাক। এক্ষেত্রে আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপিত না-হলে কোনো ফর্মুলাই কাজ করবে না এবং ‘সংলাপ’-এর মাধ্যমে কোনো ফলাফলও আমরা পাব না।
লেখক : অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক 
tsrahmanbd(a)yahoo.com

শনিবার, ২৬ মে, ২০১২

অথঃ ভিসি কাহিনী


তারেক শামসুর রেহমান
শরীফ এনামুল কবীর আমাদের ভিসি ছিলেন। তার পদত্যাগের পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় একজন নতুন ভিসি পেয়েছে। পদত্যাগী উপাচার্য আমাদের বন্ধু মানুষ। ভালো একাডেমিসিয়ান। কিন্তু তার তিন বছরের ‘রাজত্বে’ তিনি যেসব ‘কাজ’ করে গেলেন, তাতে করে ভিসি নামের একটি ‘প্রতিষ্ঠানের’ ওপর থেকে আমার আস্থা উঠে গেছে। কী পেলেন অধ্যাপক কবীর? তাকে নিয়ে প্রকাশ্যে ব্যঙ্গচিত্র এঁকেছিল ছাত্ররা। একাত্তরের ঘাতকদের মতো করে তার ব্যঙ্গচিত্র আঁকা হয়েছিল এবং তা সেঁটে দেয়া হয়েছিল সারা বিশ্ববিদ্যালয়ে। শুনেছি সচিবালয়ের গেটেও নাকি টানিয়ে দেয়া হয়েছিল দু-একটি পোস্টার। তাতে করে কি তার সম্মান বেড়েছে? কোন মুখ নিয়ে তিনি এখন দাঁড়াবেন তার সহকর্মীদের পাশে? চৈতী, তার ‘সš—ান’, ছাত্রী, যখন তার বাড়ির সামনে অনশনে বসল, তিনি তখন দিব্যি বাড়ির ভেতরে ‘খাওয়া-দাওয়া’ নিয়ে ব্য¯—! তার সহকর্মী সোমা মমতাজ, শামীমা সুলতানাও যখন অনশন করলেন, তিনি একদিনও দেখতে গেলেন না তাদের। একজন ভিসি কি এ কাজটি করতে পারেন? আমাদের আরেক সহকর্মী অধ্যাপক মামুন, যাকে আমরা সবাই ভোট দিয়ে শি¶ক সমিতির সভাপতি বানিয়েছি, তাকে যখন আরেক ‘শি¶ক’ প্রহার করল, ভিসি তখনও নির্বিকার। উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শি¶কদের অভ্যš—রীণ দ্ব›েদ্বর রেশ ধরে দু’জন শি¶ককে পুলিশ গ্রেফতার করল রাত ২টায় ভিসির নির্দেশে। কোন উপাচার্য কি পারেন এভাবে কোন নির্দেশ দিতে? একজন শি¶ক যখন অপর একজন শি¶িকা কর্তৃক যৌন নিপীড়নের অভিযোগে ‘অভিযুক্ত’ হলেন, তিনি তখন ওই অভিযুক্ত শি¶ককে ‘প্রোটেকশন’ দিলেন দলীয় বিবেচনায়। অথচ তার উচিত ছিল ওই শি¶িকার, যে কিনা তার মেয়ের বয়সী, তার পাশে গিয়ে দাঁড়ানো। ভিসি তা করেননি। উচ্চ আদালত তাকে ডেকে ভর্ৎসনা করেছিল। তাতে করে কি তার সম্মান বেড়েছিল? রাগে-দুঃখে, অপমানে ওই শি¶িকা দেশত্যাগ করেছেন। আর অভিযুক্ত শি¶ক এখন বহাল তবিয়তে, রীতিমতো ‘নেতা’ বনে গেছেন। তাকে ভিসি ব্যবহার করেছেন নিজ ¯^ার্থে। যেদিন শি¶ক ও ছাত্ররা তার বাসার গেটে অনশনে বসেছিল, তিনি তখন অন্য গেটে যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত ওই শি¶ককে বসিয়ে দিয়েছিলেন অনেকটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে। এ কাজটা করা কি সমীচীন হয়েছে তার? 
তিনি যেদিন দায়িত্ব নেন (২০০৯), সেদিন এ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবাই খুশি হয়েছিল। কারণ তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। কিন্তু ভিসি হয়ে কী করলেন তিনি? দুশ’ শি¶ক নিয়োগ দিয়েছেন, যাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তাদের অনেকেই ক্লাসে পাঠদান করতে পারেন না। এটা সর্বকালের রেকর্ড। অতিরিক্ত ও অযোগ্য শি¶ক নিয়োগ কি শি¶ার মান বাড়ায়? এক বিষয়ের ছাত্রকে ভিসি অন্য বিভাগের শি¶ক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। দল ভারি করার জন্য একের পর এক অতিরিক্ত শি¶ক নিয়োগ দিয়েছেন, যাদের পড়ানোর মতো কোন কোর্স নেই। কোন কোন বিভাগ চলছে শুধু প্রভাষকদের দিয়ে। শি¶ার মানোন্নয়ন তাতে কতটুকু হল? লজ্জায় আমার মাথা হেঁট হয়ে যায়, যখন শুনি টাকার বিনিময়ে শি¶ক ও কর্মচারী নিয়োগ হয়েছে। যদিও শি¶করা মিছিল করে এর প্রতিবাদ করেছেন, তারা নতুন উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। আশ্চর্যের বিষয়, ভিসিবিরোধী আন্দোলন যখন হচ্ছিল, তখন তারা এ প্রসঙ্গে কোন কথা বলেননি! অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসেনের বির“দ্ধে তাদের যে অভিযোগ, এ অভিযোগ এর আগেও পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তখন এরা কেউ প্রতিবাদ করেননি। ৪০ লাখ টাকা নিয়ে ধরা পড়ল জাবির এক কর্মচারী। নাম তার জসিমুদ্দিন। আশুলিয়া থানায় মামলা হল। এ তো আরেক ‘কালো বিড়ালে’র কাহিনী। যুগাš—রে ৪ মে প্রকাশিত ওই সংবাদের কোন প্রতিবাদ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপ¶। এর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন কোন কর্মকর্তা, শি¶ক জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ¯^ার্থেই এর তদš— হওয়া প্রয়োজন। বিদায়ী ভিসির বির“দ্ধে অভিযোগ, তিনি ‘ছাত্র-সাংবাদিকদের’ মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য একটি ‘প্রেস ক্লাব’ গঠন করেছেন। এর কি আদৌ কোন প্রয়োজন ছিল। ছাত্ররা সাংবাদিকতা করে। ওদেরকে ওদের মতো থাকতে দেয়াই মঙ্গল। গত ৪০ বছরে যা হয়নি, তা বিদায়ী ভিসির জমানায় হল। একজন সাংবাদিককে তিনি ‘শি¶ক’ হিসেবে নিয়োগ দিলেন কলা অনুষদের একটি বিভাগে। অভিযোগ উঠেছে, ‘ছাত্র সাংবাদিকদের’ ‘সাইজ’ করার জন্যই মূলত এ কাজটি তিনি করেছেন। এভাবে কি সাংবাদিকদের ‘নিয়ন্ত্রণে’ রাখা যায়?
ভিসিরা কেন এমন হন? শরীফ এনামুল কবীরের বাড়ি গোপালগঞ্জে। তাই বলে কি শুধু গোপালগঞ্জের মানুষকে চাকরি দিতে হবে? গ্রেটার ফরিদপুর হলেই কি শি¶ক হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে, কিংবা প্রমোশন? শুধু গোপালগঞ্জ আর ফরিদপুর নিয়েই কি বাংলাদেশ? আমার এক ছাত্র, অনার্স ও মাস্টার্স দুটোতেই প্রথম শ্রেণীতে প্রথম, শি¶ক হিসেবে তার চাকরি হয়নি। কেননা সে দলবাজ ছিল না। ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্টকে আমরা শি¶ক হিসেবে নেইনি, নিয়েছি ফার্স্ট ক্লাস সপ্তমকে। এর পেছনে যে ‘কাহিনী’, তা এ জাতির জানা দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ‘কালো বিড়াল’ রয়েছে, তা খুঁজে বের করা প্রয়োজন। একটি বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংসের জন্য এসব ‘কাহিনী’ কি যথেষ্ট নয়? ইতিহাসে শরীফ এনামুল কবীরের নাম থেকে যাবে বটে, কিন্তু সে নামকে উজ্জ্বল করবে না।
যখন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে ছিলাম, তখন তদš— করে দেখেছিলাম অনেক ভিসি অতিরিক্ত জ্বালানি খরচ করেন। ব্যক্তিগত কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ব্যবহার করেন। আমি মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট জমা দিয়েছিলাম। এখন শুনছি, সাবেক ভিসি একাধিক গাড়ি ব্যবহার করতেন। গাড়ি অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে তার বির“দ্ধে। এটা যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে তা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। আরেকজন উপ-উপাচার্য গত চার বছর নিয়মিত ঢাকা থেকে গিয়ে সরকারি জ্বালানি (গ্যাস নয়, অকটেন) খরচ করে অফিস করেছেন। তিনি এটি পারেন না। মঞ্জুরি কমিশনের উচিত ‘সরকারি অর্থের অপচয়ের’ অভিযোগটি তদš— করে দেখা। একজন উপাচার্য, উপ-উপাচার্য আর্থিক কেলেংকারিতে অভিযুক্ত হবেন নাÑ এমনটাই দেখতে চাই।
ভিসিরা কেন এমন হন? ভিসি হলেই নিজ এলাকার লোকদের চাকরি দিতে হবে। রংপুর কিংবা বরিশালের ভিসির যেসব কাহিনী পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে তা ভয়াবহ। রংপুরের রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নাকি আপনজন থেকে শুর“ করে তার গ্রামের বাড়ির প্রায় অর্ধশত লোককে ‘চাকরি’ দিয়েছেন। ছেলে, ছেলের বউ, ভাইÑ কে নেই সেই লিস্টে। এরা কেমন উপাচার্য? জাবির ভিসি তার নিজের মেয়েকে শি¶ক বানাননি বটে, কিন্তু তার সঙ্গে যারা ‘দল’ করেছেন তাদের সবার সš—ানের, তাদের বউ অথবা ¯^ামীদের ‘চাকরি’ হয়েছে জাহাঙ্গীরনগরে। তারা এত ‘মেধাবী’ যে তাদের অন্য ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কোথাও চাকরি হয় না! বিশ্ববিদ্যালয় কি চাকরির একটি ¶েত্র? এখানে নিজের আÍীয়¯^জন কিংবা দলীয় লোকদের অথবা নিজ এলাকার লোকদের চাকরি দিতে হবে? এমন ভিসি আমরা কবে পাব, যিনি দলবাজ হবেন না, যোগ্যদেরই শি¶ক হিসেবে নিয়োগ দেবেন? শি¶ক নিয়োগের প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনা তাই প্রয়োজন। শুধু শি¶া¶েত্রে ‘সাফল্য’ বিবেচনায় নিলে চলবে না। তার উপস্থাপনের যোগ্যতা এবং লিখিত ও মৌখিক পরী¶া নেয়াও জর“রি। আর এ কাজটি করবে মঞ্জুরি কমিশন, বিশ্ববিদ্যালয় নয়। উপাচার্যের হাতে শি¶ক নিয়োগের কোন ¶মতা থাকবে না। এর চেয়েও বড় কথা, একজন ছাত্রকে পাস করার পর গবেষণা সহকারী হিসেবে একজন সিনিয়র শি¶কের অধীনে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। পৃথিবীর প্রতিটি উন্নত দেশে এমনটি আছে। তারপরই তাকে শি¶ক হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে, এর আগে নয়। মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আজাদ চৌধুরী তো পারেন সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শি¶ক নিয়োগের জন্য নতুন একটি আইন করতে। এটি নিয়ন্ত্রণ করবে মঞ্জুরি কমিশন। উপাচার্যের হাতে ¶মতা থাকলে দলবাজ শি¶কদের সš—ানরা শি¶ক হবে, আর মেধাবীরা হারিয়ে যাবে। জাবির শি¶কদের প¶ থেকে দাবি উঠেছে বিগত তিন বছরের সব অনিয়মের শ্বেতপত্র প্রকাশ করার। ¶তি কী? বিশ্ববিদ্যালয়ের ¯^ার্থেই এটি করা উচিত। আর এভাবে অনির্বাচিত উপাচার্য নয়, আমরা চাই নির্বাচিত একজন উপাচার্য, যার দায়বদ্ধতা থাকবে জাবি পরিবারের কাছে। জাবিতে অনেক ‘¶ত’ সৃষ্টি হয়েছে। সাবেক ভিসি ওই ‘¶তগুলো’ সারিয়ে তোলার কোন উদ্যোগ নেননি। ফলে অনাকাক্সি¶ত অনেক ঘটনা ঘটেছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেখানে সিনিয়র শি¶করা অপমানিত হয়েছেন। অত্যš— সুকৌশলে সিনিয়র-জুনিয়র দ্ব›দ্ব ‘তৈরি’ করা হয়েছে, যা কাক্সি¶ত নয়।
অন্যায়ের বির“দ্ধে ‘বিদ্রোহ’ করা যে ন্যায়সঙ্গত, এটা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তর“ণ শি¶ক ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা প্রমাণ করলেন। তাদের লাল সালাম। হƒদয় নিংড়ানো ভালোবাসা তাদের জন্য। তাদের ‘কাজটি’ এখনও শেষ হয়ে যায়নি। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের হারানো গৌরব ফিরিয়ে নিয়ে আসার ব্যাপারে তাদেরই পালন করতে হবে বড় ভ‚মিকা। আন্দোলনের একটা ধাপ পার হয়েছে মাত্র। বাকি কাজগুলো এখনও অসমাপ্ত। অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন নতুন মানুষ। তিনি অনেক কিছুই জানেন না। তাকে ‘পরামর্শ’ দেয়ার ইচ্ছা আমার নেই। তবে নিচের কাজগুলো যদি তিনি করেন, তিনি ভালো করবেন। 
১. সব ধরনের নিয়োগ (কর্মকর্তা, শি¶ক, কর্মচারী) আপাতত কয়েক মাসের জন্য বন্ধ রাখা; ২. বিগত প্রশাসনের সব অনিয়ম, আর্থিক দুর্নীতি খতিয়ে দেখার জন্য মঞ্জুরি কমিশনকে চিঠি লেখা ও মঞ্জুরি কমিশনের একজন সদস্যের নেতৃত্বে একটি তদš— কমিটি গঠনের প্র¯—াব করা; ৩. উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা এবং এ সংক্রাš— প্রাক-নির্বাচনগুলো সম্পন্ন করা; ৪. সাবেক উপাচার্য একটি মোসাহেবী শ্রেণী তৈরি করেছিলেন, যারা তাকে ঘিরে থাকত। ওই মোসাহেবী শ্রেণী থেকে দূরে থাকতে পারলে নতুন ভিসি ভালো করবেন; ৫. আন্দোলনকারী শি¶কদের ‘শত্র“’ নয়, বরং ‘বন্ধু’ ও সহকর্মী ভাবা; ৬. সব দল ও মতের শি¶কদের নিয়ে একটি ‘পরামর্শ কমিটি’ গঠন করা; ৭. বিতাড়িত ছাত্র ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের ক্যাম্পাসে ফিরে আসা ও সহাবস্থানের পরিবেশ নিশ্চিত করা; ৮. শি¶ার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা। 
শরীফ এনামুল কবীর ‘রাজনীতি’ করা মানুষ। রাজনীতি করলে ‘সংকট’ তৈরি হবে। তিনি ভালো করবেন, যদি তিনি নিরপে¶ থেকে বর্তমান উপাচার্যকে সাহায্য ও সহযোগিতা করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে শি¶ার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেন। একজন ভিসির পদত্যাগই যথেষ্ট নয়। যেসব সমস্যা তৈরি হয়েছে, নতুন প্রশাসনকে সেসব সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হতে হবে।
ড. তারেক শামসুর রেহমান : বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক সদস্য ও প্রফেসর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
ঃংৎধযসধহনফ@ুধযড়ড়.পড়স 

বিএনপির গণঅনশনের পর


 তারেক শামসুর রেহমান
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের বিষয়টি অত সহজ নয়। এ ক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধনী আনা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। বর্তমান সংবিধান রেখে কোনো নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করা যাবে না। প্রশ্ন হচ্ছে, সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব কে আনবে? সরকার? বিরোধী দল? নাকি সরকারের কোনো 'বন্ধু'? এটা তো ঠিক, বিরোধী দল কোনো সংশোধনী আনলে তা সংসদে পাস করানো যাবে না। তাদের সেই 'সংসদীয় ক্ষমতা' নেই। একমাত্র সরকার যদি 'সিদ্ধান্ত' নেয়, তাহলেই সংবিধান সংশোধনী আনা সম্ভব। সরকার নীতিগতভাবে একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে জোটভুক্ত কোনো 'দল'কে দিয়ে এ ধরনের একটি প্রস্তাব সংসদে উপস্থাপন করতে পারে

বিএনপি এবং ১৮ দলের গণঅনশনের পর যে প্রশ্নটি এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, তা হচ্ছে এরপর কী? এরপর কী কর্মসূচি নেবে বিরোধী দল? ইলিয়াস আলীর 'গুম' হওয়ার ঘটনায় ৫ দিন হরতাল পালন করল বিএনপি। তারপর কাটল অনাকাঙ্ক্ষিত সেই ঘটনা_ বিরোধী দলের শীর্ষস্থানীয় ৩৩ নেতাকে জেলে পাঠানো হলো জামিন না দিয়ে। প্রতিবাদে এবার হরতাল হলো না বটে, কিন্তু গণঅনশন হলো। এটাও এক ধরনের প্রতিবাদ। হরতাল নিয়ে নানা মহলের আপত্তি। ব্যবসায়ীরা কখনও হরতাল চান না। খোদ হিলারি ক্লিনটনও বলে গেলেন হরতাল না দেওয়ার জন্য। এখন কী করবে বিএনপি? স্পষ্টতই সরকার হার্ডলাইনে গেছে। এতে করে সরকারের 'অর্জন' কতটুকু সে ব্যাপারে অনেকেরই সন্দেহ রয়েছে, তবে সাধারণ মানুষ যে এক ধরনের শঙ্কার মধ্যে থাকে, তা তো স্পষ্ট। সরকারের এই হার্ডলাইনের পলিসি রাজনীতির সংস্কৃতির জন্য কোনো ভালো সংবাদ বয়ে আনবে না। ভবিষ্যতে যারাই ক্ষমতায় যাবেন, তারাও এই 'মডেল' অনুসরণ করবেন। এতে করে সুস্থ রাজনীতি বিকশিত হবে না। বিএনপি 'বিপদে' আছে, সেটা স্পষ্ট। ব্যক্তিনির্ভর ১৮ দল নিয়ে বিএনপি খুব লাভবান হয়েছে বলে মনে হয় না। এই ১৮ দলের অনেকটির নাম আমি নিজেও জানি না, নেতাদের নাম তো পরের কথা। এ দেশের তরুণ প্রজন্ম একটি শক্তি। তাদের অনেকেই এখন ভোটার। নিউইয়র্কের 'অকুপাই মুভমেন্ট' থেকে 'আরব বসন্ত' প্রতিটি ক্ষেত্রেই তরুণরা আন্দোলনকে সংগঠিত করেছে। বাংলাদেশের এই তরুণ সমাজের কাছে বিএনপি কি কোনো ম্যাসেজ পেঁৗছে দিতে পেরেছে? বিএনপির যে তরুণ নেতৃত্ব তারা কি এই কাজটি করতে পেরেছেন?
সরকারের বিপক্ষে বলার অনেক কিছু আছে। অর্থনীতির সূচকগুলো কোনো আশার কথা বলে না (গড়ভিত্তিক মূল্যস্ফীতি ১০.৮৬ শতাংশ, রফতানি আয় বৃদ্ধি আগের অর্থবছরের ৪১.৪৭ শতাংশ বৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়েছে মাত্র ৮.৪১ শতাংশ। অথচ আমদানি ব্যয় বেড়েছে ১১.২২ শতাংশ। টাকার মান কমেছে)। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের কোনো কূল-কিনারা হয়নি। ইলিয়াস আলী আদৌ বেঁচে আছেন কিনা সেটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়েই রয়েছে। এখন যুক্ত হলো ৩৩ জন শীর্ষস্থানীয় নেতার জেলে প্রেরণের ঘটনা। আইন তার নিজ গতিতেই চলবে এবং আইনের বিচারেই তাদের ভাগ্য নির্ধারিত হবে। কিন্তু আস্থার একটা ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে_ তা আমরা পূরণ করব কীভাবে? পরবর্তী সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা বলে গেছেন হিলারি ক্লিনটন। তিনি বলেছেন, একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। এই অভিমতের সঙ্গে সুশীল সমাজের অনেকেই একমত। এমনকি অধ্যাপক ইউনূস ও ফজলে হাসান আবেদও একই অভিমত দিয়েছিলেন। যদিও এর আগে ড. কামাল হোসেন কিংবা ব্যারিস্টার রফিক-উল হকও একই ধরনের অভিমত দিয়েছিলেন। সরকার তাতে আদৌ গুরুত্ব দেয়নি। এখন হিলারি ক্লিনটনের উপস্থিতিতে ড. ইউনূস ও আবেদ যখন একই অভিমত দিলেন তখন সরকার এটাকে গুরুত্ব দিলে ভালো করবে। ধারণা করছি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও চায় একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক। বর্তমান সরকার তাদের ক্ষমতার শেষ পর্যায়ে এসেছে। গত ৪০ মাসে তারা কতটুকু তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পেরেছে, তার ভার জনগণের ওপর ছেড়ে দেওয়াই মঙ্গল। এ ক্ষেত্রে একটি নিরপেক্ষ সরকারের হাতে নির্বাচন পরিচালনার ভার দিলে তাতে ক্ষতির কিছু নেই। বরং আমার বিশ্বাস, সরকারের জনপ্রিয়তা তাতে বাড়বে। যদিও বিএনপির দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের বিষয়টি অত সহজ নয়। এ ক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধনী আনা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। বর্তমান সংবিধান রেখে কোনো নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করা যাবে না। প্রশ্ন হচ্ছে, সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব কে আনবে? সরকার? বিরোধী দল? নাকি সরকারের কোনো 'বন্ধু'? এটা তো ঠিক, বিরোধী দল কোনো সংশোধনী আনলে তা সংসদে পাস করানো যাবে না। তাদের সেই 'সংসদীয় ক্ষমতা' নেই। একমাত্র সরকার যদি 'সিদ্ধান্ত' নেয়, তাহলেই সংবিধান সংশোধনী আনা সম্ভব। সরকার নীতিগতভাবে একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে জোটভুক্ত কোনো 'দল'কে দিয়ে এ ধরনের একটি প্রস্তাব সংসদে উপস্থাপন করতে পারে। ওয়ার্কার্স পার্টি কিংবা জাসদ নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণা সমর্থন করে। তারাও একটি প্রস্তাব সংসদে উপস্থাপন করতে পারে। তবে নিঃসন্দেহে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার 'ওয়াল-ইলেভেনে'র সময়কার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো হবে না। এর একটি নতুন কাঠামো দেওয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন 'ফর্মুলা' নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এক. ড. ইউনূস ও ফজলে হাসান আবেদের যৌথ নেতৃত্বে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার, যাদের দায়িত্ব হবে তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করা। কোনো উপদেষ্টা থাকবেন না। সচিবরা মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন পরিচালনা করবেন। এই সরকার নীতিগত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। দুই. ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের নেতৃত্বে একটি সরকার। ব্যারিস্টার হক দুটি দলেরই 'বন্ধু' এবং দুই দলীয় প্রধানের কাছেই গ্রহণযোগ্য। তিন. প্রধান বিচারপতি অথবা সংসদের বর্তমান স্পিকারকে প্রধান করে সরকার ও বিরোধী দলের ৫ জন করে প্রতিনিধি নিয়ে (যারা নির্বাচন করতে পারবেন না। স্পিকারও নির্বাচন করবেন না) ৩ মাসের জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যাদের দায়িত্ব নির্বাচন আয়োজন করা। চার. একটি 'এলডার্স কাউন্সিল' গঠন, যাদের দায়িত্ব হবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করা। এই 'এলডার্স কাউন্সিল' যৌথ নেতৃত্বে পরিচালিত হবে। সদস্যসংখ্যা তিন থেকে চারে হতে পারে। সাবেক তিন প্রধান বিচারপতি তিনজন গুণী ব্যক্তি অথবা তিনজন সাংবিধানিক পদমর্যাদার অধিকারী ব্যক্তিকে নিয়েও এই 'এলডার্স কাউন্সিল' গঠিত হতে পারে। এ ধরনের যে কোনো 'ফর্মুলা' সংবিধানের কোনো অংশ হবে না। সংসদে গৃহীত একটি সিদ্ধান্তের মাধ্যমেও এটি করা সম্ভব। তবে বিষয়টি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক যাতে না হয়, সে ব্যাপারে সংবিধান বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ করা যেতে পারে।
সরকার বারবার বলছে, তারা গত ৪০ মাসে যেসব কর্মসূচি নিয়েছে তাতে জনগণের স্বার্থ নিহিত রয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো (?) থেকে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত_ প্রতিটি সিদ্ধান্তই জনস্বার্থে করা। এটা যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে তাদের ভয় থাকার কথা নয়। জনস্বার্থে হলে জনগণই তাদের পুনরায় ক্ষমতায় বসাবে। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত যদি না হয়, তাহলে রাজনৈতিক সংকট আরও বাড়বে। এতে বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে এবং বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। সমুদ্রে আমাদের অধিকার রক্ষিত হওয়ায় তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানে বিদেশি আইওসির আগ্রহ বেড়েছে। তারা বিনিয়োগ করতে চান। কিন্তু এর জন্য চাই পরিবেশ, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। এই স্থিতিশীলতা বিঘি্নত হলে বিনিয়োগ আসবে না। অর্থনীতি সচল হবে না। এমনকি গরিব দেশগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ অ্যাকাউন্ট থেকে যে সাহায্য পায়, আমরা সেই সাহায্যও পাব না স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে। হার্ডলাইনে যাওয়ার সিদ্ধান্তটি ভালো নয়। প্রয়োজন সমঝোতার। প্রয়োজন একটি সংলাপের।

প্রফেসর ড. তারেক শামসুর রেহমান : আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
tsrahmanbd@yahoo.com

সোমবার, ২১ মে, ২০১২

আফগান নির্বাচন কি স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে



ড. তা রে ক শা ম সু র রে হ মা ন ২০০৯-০৮-১৬
অাগামী ২০ আগষ্ট বৃহসপতিবার আফগানিস্তানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান সহিংসতা, তালেবানদের ক্ষমতাবৃদ্ধি আর ব্রিটিশ জেনারেল ডেভিড রিচার্ডসের আরও ৪০ বছর আফগানিস্তানে থাকার অভিপ্রায়ের মধ্য দিয়ে এ নির্বাচন যে কোনো বিবেচনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা কোনো কোনো মহল থেকে আফগানিস্তানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার স্বার্থে তালেবানদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু করার যে আহ্বান জানানো হয়েছে নির্বাচিত পেরসিডেন্ট সে ব্যাপারে কী ভূমিকা নেন, তা নিয়ে আগ্রহ থাকবে অনেকের। গত প্রায় ৩০ বছর আফগানিস্তানে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। যুদ্ধ, গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব, সংঘাত এখন আফগানিস্তানের নিত্যসঙ্গী। ১৯৭৯ সালের ডিসেম্বরে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন দেশটি দখল করে নিয়েছিল। আর তার ঠিক ২২ বছর পর সেই একই ডিসেম্বর মাসে আফগানিস্তান 'দখল' করে নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী। আজও সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী আছে। আছে ন্যাটো বাহিনীও। কিন্তু যুদ্ধ থামেনি। আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনের মধ্য দিয়ে যে গৃহযুদ্ধের সূচনা, সেই গৃহযুদ্ধ আজও চলছে। শুধু যুদ্ধের পক্ষগুলোর পরিবর্তন হয়েছে। এক সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন দেশটি দখল করে সোভিয়েত রাজনীতি সমর্থিত কমিউনিষ্ট পার্টির (পারচাম) নেতা বারবাক কারমালকে সেখানে ক্ষমতায় বসিয়েছিল। তিনি ক্ষমতায় ছিলেন ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত। এরপর ক্রেমলিন নেতৃত্ব ক্ষমতায় বসিয়েছিল ডা. নাজিবুল্লাহকে। উদ্দেশ্য তৎকালীন যুদ্ধরত মুজাহিদীনদের সঙ্গে এক ধরনের সমঝোতায় গিয়ে তাদের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রাখা। বৃহৎ শক্তির সেই ষ্ট্যাটেজিতে কোনো পরিবর্তন হয়নি। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র খুঁজে পেয়েছিল 'আরেক বারবাক কারমাল' হামিদ কারজাইকে। ২০০১ সালের ২২ ডিসেম্বর কারজাই আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। আর ২০০৫ সালে তথাকথিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হন। সেই অর্থে আগামী ২০ আগষ্ট যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তা দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। কারজাই আবারও প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আফগান জনগণের জন্য আদৌ কি কোনো অর্থ বহন করে? এর জবাব সম্ভবত না। কেননা গত ৩০ বছরের যুদ্ধে কাবুলের মসনদে শক্তির পরিবর্তন হয়েছে। সাধারণ মানুষের জন্য যে এতটুকু নিরাপত্তা, তা নিশ্চিত করতে পারেননি কেউই। এক সময় সোভিয়েত শাসকরা বারবাক কারমালকেও সরিয়ে দিয়েছিল। আর এখন হামিদ কারজাই কখন ক্ষমতা থেকে অপসারিত হন সেটাই দেখার বিষয়। অতীতে বারবাক কারমালকে সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি তৈরি করেছিল। ঠিক একই প্রক্রিয়ায় সিআইএ হামিদ কারজাইকে তৈরি করেছিল আফগানিস্তানের পরবর্তী নেতা হিসেবে। নিউইয়র্ক টাইমস ম্যাগাজিনে (৪ আগষ্ট, ২০০৯) এলিজাবেথ রুবিন লিখিত এক প্রবন্ধে এই তথ্য পাওয়া গেছে। ১৯৯২ সালে মুজাহিদীনদের নেতৃত্বে কাবুলে যে সরকার গঠিত হয়েছিল, সেই সরকারে হামিদ কারজাই ছিলেন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তালেবানদের কাবুল দখলের (১৯৯৫) আগেই অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার দ্বন্দ্বে কারজাইকে জেলে পাঠানো হয়েছিল (১৯৯৪)। পরে জেল থেকে পালিয়ে তিনি পাকিস্তান চলে যান। সিআইএ সেখানেই তাকে রিক্রুট করে। যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১-এর ঘটনাবলীর পর তালেবানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পাহাড়ি উপজাতিদের উদ্বুদ্ধ করতে সিআইএ কারজাইকে ব্যবহার করেছিল। এক পর্যায়ে তালেবানদের একটি গোষ্ঠীর হাতে বন্দিও হয়েছিলেন কারজাই। তখন সিআইএ'র একটি 'সেপশাল মিশন' তাকে উদ্ধার করে পাকিস্তান নিয়ে এসেছিল। সেই থেকে তিনি সিআইএ'র 'প্রিয়মানুষ'। তবে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা 'র'র সঙ্গেও তার যোগাযোগ রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। কারজাই ভারতে পড়াশোনা করেছেন। ভারতে থাকাকালেই তিনি ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার নজরে পড়েন। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের কারণেই কারজাই কাবুলে ক্ষমতাসীন হয়েছেন এবং এই দুই শক্তির স্বার্থ যতদিন তিনি রক্ষা করবেন, ততদিনই তিনি থাকবেন ক্ষমতায়। কারজাই তার ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য এরই মধ্যে ড্রাগ মাফিয়াদের নিয়ে একটি গোষ্ঠী গড়ে তুলেছেন, যাদের পরামর্শেই মূলত তিনি ক্ষমতা চালাচ্ছেন। কান্দাহার প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ মূলত তার সৎ ভাই আহমেদ ওয়ালি কারজাইর হাতে। ওয়ালি আফগানিস্তানের মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এবং এই অবৈধ ব্যবসা মূলত তিনিই নিয়ন্ত্রণ করেন। ওয়ালির পাশাপাশি রয়েছেন হেলমন্দ প্রদেশের সাবেক গভর্নর মোর মোহাম্মদ আখুনজাদা, জেনারেল দোস্তাম, মোহাম্মদ ফাহিম ও মোহাক্কিকের মতো যুদ্ধবাজ নেতারা। আখুনজাদা নিজেও আফিম ব্যবসায়ী। দোস্তাম অন্যতম যুদ্ধবাজ ও উজবেক উপজাতির লোক। তিনি নিজে নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের নেতা। ফাহিম তাজিক, সাবেক গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান ও বর্তমানে কারজাইয়ের রানিং মেট। মোহাক্কিক হাজারা উপজাতির লোক ও অন্যতম যুদ্ধবাজ। এদের প্রত্যেকের নিজস্ব বাহিনী রয়েছে। এদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে প্রচুর অসত্রশসত্র। এসব যুদ্ধবাজকে নিয়েই একটি চক্র গড়ে তুলেছেন কারজাই। আর এই যুদ্ধবাজদের অসেত্রর অন্যতম উৎস হচ্ছে মাদক বিক্রির টাকা। এ টাকা দিয়ে তারা অসত্র ক্রয় করেন। হিলারি ক্লিনটনের ভাষায়-আফগানিস্তান তাই পরিণত হয়েছে অন্যতম ?ঘধৎপড় ংঃধঃব?-এ। অর্থাৎ মাদক রাষ্ট্র, যেখানে সর্বোচ্চ প্রশাসনের ইঙ্গিতে মাদক বিকিকিনি হয়। রাষ্ট্র এই বিকিকিনি অনুমোদন করে। টিআই'র রিপোর্ট অনুযায়ী আফগানিস্তান বিশ্বের পঞ্চম দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্র। দুর্নীতির পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা আফগানিস্তানে একটি স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের একাধিক প্রতিবেদনে এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ঘানি, যিনি সাবেক অর্থমন্ত্রী। ২০০২ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি অর্থমন্ত্রী ছিলেন। নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি দুর্নীতির একটি ঘটনা তুলে ধরেন। তিনি জানান, ২০০৮ সালে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে রাজস্ব জমা হয়েছে ৮০০ মিলিয়ন ডলার (৪০ মিলিয়ন আফগানি)। অথচ এর চেয়ে কয়েক গুণ বেশি আদায় হয়েছে, যা কোষাগারে জমা হয়নি। ঘানি এ জন্য দায়ী করেছেন ওই চক্রকে, যাকে তিনি অভিহিত করেছেন ?কধৎুধর ওহপড়ৎঢ়ড়ৎধঃবফ? হিসেবে। অর্থাৎ একটি মাফিয়াচক্র কারজাইকে সামনে রেখে দেশের অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, রাষ্ট্রীয় সম্পদ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। কারজাইর পরিবারও বৈধ-অবৈধ সব ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। সৎ ভাই ড্রাগ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন। আরেক ভাই মাহমুদ নিয়ন্ত্রণ করেন ব্যাংক ও রিয়েল এষ্টেট ব্যবসা। আফগানিস্তানের টয়োটার ৫০ ভাগ শেয়ার মাহমুদের। কান্দাহারের মানুষ কারজাই। 'কান্দাহারি পশতুন' হিসেবেই তিনি পরিচিত। বাবা ছিলেন গোত্রপ্রধান। ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানে আততায়ীর হাতে তিনি নিহত হন। কারজাই নিজের অবস্থানকে ধরে রাখার জন্য সিআইএ প্রণীত ফর্মুলা অনুসরণ করে চলেছেন। এই ফর্মুলায় যুদ্ধবাজরা আজ তার মিত্র। উত্তরে জেনারেল দোস্তাম ও কান্দাহারে যুদ্ধবাজ নেতা সিরাজী যেমনি তার 'বন্ধু'; ঠিক তেমনি হেরাতের আরেক যুদ্ধবাজ নেতা ইসমাইল খানও তার 'বন্ধু'। তিনি যুদ্ধবাজ নেতাদের স্বার্থরক্ষা করেই কাবুলে নিজের ক্ষমতা ধরে রেখেছেন। ডোনাল্ড রামসফেল্ড এই ফর্মুলাকে চিহ্নিত করেছেন ?ওৎববহ ড়হ ওৎববহ ংরঃঁধঃরড়হ? হিসেবে। এর অর্থ হচ্ছে ?ভৎরবহফষু ংড়ষফরবৎ ধমধরহংঃ ভৎরবহফষু ংড়ষফরবৎ?। কারজাই এসব যুদ্ধবাজ নেতাকে নিজস্ব সেনাবাহিনী রাখতেই শুধু দেননি, বরং অবৈধ মাদক ব্যবসা ও নিজস্ব ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণেরও সুবিধা দিয়েছেন। এ কারণে ভবিষ্যৎ আফগান রাষ্ট্রের কল্পনা করাও কঠিন। এর মধ্যেই আফগানিস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আলাদা প্রশাসন, যেখানে কেন্দ্রীয় প্রশাসনের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। স্থায়ীভাবেই যুদ্ধবাজ নেতারা অনেকটা 'স্বাধীন'। অসত্র ও মাদক এখন আফগানিস্তানের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে। ২,৫১,৮২৫ বর্গমাইলের যে বিশাল পাহাড়ি এলাকা, সেই পাহাড়ি এলাকা আবার ৩২ প্রদেশে বিভক্ত। প্রতিটি প্রদেশেই রয়েছে একাধিক যুদ্ধবাজ নেতা, যারা স্থানীয়ভাবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। কোথাও কোথাও এসব যুদ্ধবাজ নেতা আবার তালেবানদের মিত্র। জনসংখ্যার মাঝে পশতুন (৩৮ ভাগ) এর প্রাধান্য বেশি। এরপর রয়েছে তাজিক (৩৫ ভাগ), হাজারা (১৯ ভাগ) ও উজবেকদের (৬ ভাগ) প্রাধান্য। কারজাই নিজে পশতুন হলেও, ভুলে গেলে চলবে না তালেবানদের মাঝেও পশতুন গোষ্ঠীর বড় প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানে আদৌ কোনো পরিবর্তন আসবে বলে মনে হয় না। মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ঘানি ও আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ। আবদুল্লাহ সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এক সময় প্রয়াত যুদ্ধবাজ নেতা শাহ আহমেদ মাসুদের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি। এরা খুব একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারবেন বলে মনে হয় না। যে কারণে কারজাই শেষ পর্যন্ত 'বিজয়ী' হবেন। কিন্তু তারপর? শান্তি ও স্থিতিশীলতা সেখানে কীভাবে নিশ্চিত হবে? 'যুদ্ধবাজ রাষ্ট্র' এর অপবাদ থেকে কি আফগানিস্তান বেরিয়ে আসতে পারবে কখনও? আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সেখানকার সমস্যার কোনো সমাধান দিতে পারবে না। সমাধানের একমাত্র পথ হতে পারে তালেবানদের সঙ্গে সহাবস্থান। তালেবানরা আজ আফগানিস্তানের অন্যতম শক্তি। এদের সঙ্গে 'সংলাপ'-এ যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে আফগানিস্তানের ধর্মীয় নেতারা একটা বড় ভূমিকা পালন করতে পারেন। তারা সহাবস্থানের একটি উদ্যোগ নিতে পারেন। 'লয়া জিরগা'য় তালেবান নেতাদের স্থান দিয়ে তাদের আস্থায় নেয়া যায়। জিমি কার্টার কিংবা বিল ক্লিনটনের মতো সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টরা সম্প্রতি যে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছেন, এদের আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে না। শুধু ধর্মীয় নেতারাই গ্রহণযোগ্য হবেন। ব্রিটিশ জেনারেল রিচার্ড (যিনি সেনাবাহিনী প্রধানের দায়িত্ব নেবেন) ২০৫০ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে থাকার যে অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন, তা একটি ভুল সিদ্ধান্ত। এতে করে বরং জটিলতা আরও বাড়বে। যুক্তরাষ্ট্র ইরাক থেকে পর্যায়ক্রমে সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওবামা প্রশাসন আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে যদি এমনটি করে তাহলে তিনি ভালো করবেন। এক্ষেত্রে জেনারেল ষ্ট্রানলে ম্যাকরিষ্টাল (যিনি আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনী প্রধান) একটি ভূমিকা পালন করতে পারেন। তার রিপোর্ট ওবামা প্রশাসনকে সিদ্ধান নিতে সাহায্য করবে। মনে রাখতে হবে গত ৩০ বছরের যুদ্ধে কোনো পক্ষই 'জয়ী' হয়নি। কিন্তু দেশটি ধ্বংস হয়ে গেছে। হামিদ কারজাই দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট হবেন সত্য, কিন্তু যুদ্ধ তো বন্ধ হবে না। তাই নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে যে প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, তা হচ্ছে ওবামা প্রশাসন কি সত্যি সত্যিই আফগান যুদ্ধের অবসান চান? এর জবাবের জন্য আমাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। 

সোমবার, ১৪ মে, ২০১২

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য সম্পর্কে দুটি কথা




তা রে ক  শা ম সু র  রে হ মা ন


ময়িানমাররে সঙ্গে সমুদ্রসীমা নর্ধিারতি হয়ে যাওয়ার পর দশে দুুটরি মাঝে সর্ম্পক উন্নয়নরে একটি সম্ভাবনার যখন জন্ম হয়ছে,ে ঠকি তখনই আমাদরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি ময়িানমাররে বরিুদ্ধে ‘নালশি’ করলনে ওআইসরি সম্মলেনে র্তুকমনেস্তিানরে রাজধানী আশগাবাদ।ে তনিি ওই সম্মলেনে অভযিোগ করছেনে য,ে ময়িানমাররে রোহঙ্গিারা বাংলাদশেরে সমাজে ক্ষতকির প্রভাব ফলেছ।ে রোহঙ্গিাদরে নজি দশেে ফরেত পাঠানোরও দাবি করনে তনিি (সকালরে খবর, ১৩ ম)ে। দীপু মনি যা বলছেনে তার মধ্যে কোনো মথ্যিা নইে। রোহঙ্গিারা আমাদরে জন্য একটা সমস্যা। এটা নয়িে র্দীঘদনি দু’দশেরে মাঝে দনেদরবার চলছ।ে কন্তিু আর্ন্তজাতকি আসরে বলার সময় এখনও আসনে।ি সবচয়েে বড় কথা, ময়িানমার ধীরে ধীরে ‘উন্মুক্ত’ হয়ে যাচ্ছ।ে র্মাকনি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ তাদরে র্অথনতৈকি অবরোধ প্রত্যাহার করে নয়িছে।ে সে ক্ষত্রেে আমাদরে জন্যও একটা সম্ভাবনার ক্ষত্রে তরৈি হয়ছে।ে এখন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই বক্তব্য দু’দশেরে মাঝে একটা আস্থার ঘাটতি সৃষ্টি করতে পার।ে আমরা পররাষ্ট্রনীততিে খুব সফলতা দখেছি না। তাদরে র্ব্যথতা এখানইে য,ে তারা বাংলাদশেরে জাতীয় র্স্বাথ আদায়ে দ্বপিাক্ষকি আলোচনায় কোনো সফলতার পরচিয় দতিে পারনেন।ি এমনকি কোনো কোনো ক্ষত্রেে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পাশ কাটয়িে দু’জন উপদষ্টোকে তত্পর হতে দখো গছে,ে যদওি কোনো ক্ষত্রেইে বাংলাদশেরে জাতীয় র্স্বাথ রক্ষতি হয়ন।ি শুধু তাই নয়, ভারতকে বশেি গুরুত্ব দতিে গয়িে আমরা আমাদরে প্রতবিশেী ময়িানমারকে কখনই ববিচেনায় নইিনি এবং নকিট প্রতবিশেী চীনরে সঙ্গে সর্ম্পক আরও গাঢ় করার তমেন কোনো বড় উদ্যোগ নইিন।ি আমাদরে জাতীয় র্স্বাথরে কারণে ময়িানমার ও চীনরে প্রয়োজন রয়ছেে অনকে বশে।ি যদওি প্রধানমন্ত্রী শখে হাসনিা চীন ও ময়িানমার সফর করছেনে, কন্তিু দশে দুটরি সঙ্গে উল্লখেযোগ্য অগ্রগতি সাধতি হয়ছে,ে তা বলা যাবে না। তবে একটি সম্ভাবনার ক্ষত্রে তরৈি হয়ছেলি। এই সম্ভাবনা এখন প্রশ্নরে মুখে দাঁড়য়িছে।ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগ্য নতেৃত্ব দরকার, যারা সময়রে ববিচেনাকে প্রাধান্য দয়িে পররাষ্ট্রনীততিে নয়া দকিনর্দিশেনা দবেনে।
আমাদরে পররাষ্ট্রনীতরি একটি বশৈষ্ট্যি হচ্ছে আমরা বহুপাক্ষকিতায় বশ্বিাসী। কন্তিু ভারতরে দ্বপিাক্ষকিতার কারণে আমরা আমাদরে পররাষ্ট্রনীতরি বহুপাক্ষকিতার চরত্রি হারয়িে ফলেছে।ি ফলে আমাদরে জাতীয় র্স্বাথ রক্ষতি হচ্ছে না। ময়িানমাররে জ্বালানি সম্পদকে আমরা কাজে লাগাতে পারনিি সঠকি সময়ে সঠকি সদ্ধিান্তটি না নওেয়ার কারণ।ে অথচ চীন, থাইল্যান্ড এবং ভারতও এই জ্বালানি সম্পদকে ব্যবহার করছ।ে প্রতবিশেী দশে হওয়ার কারণে আমাদরে সুযোগ ছলি সবচয়েে বশে।ি চট্টগ্রামে ময়িানমাররে কাঁচামালভত্তিকি শল্পি-কারখানা স্থাপনরে সম্ভাবনা থাকলওে আমরা এ ব্যাপারে গত তনি বছরে কোনো উদ্যোগ নইিন।ি ময়িানমার-চট্টগ্রাম সীমান্তে সার কারখানা স্থাপন করে ময়িানমাররে বপিুল সাররে চাহদিা আমরা পূরণ করতে পারতাম। কন্তিু তা হয়ন।ি আকয়িাব, মংডুর আশপাশে প্রচুর বাঁশ, কাঠ ও চুনাপাথর পাওয়া যায়। এর ভত্তিতিে চট্টগ্রাম অঞ্চলে সমিন্টে ও কাগজ শল্পি বকিশতি হতে পারত। সঠকি দকিনর্দিশেনার অভাবে তা হয়ন।ি এমনকি বাংলাদশেে বসেরকারি উদ্যোক্তাদরেও আমরা উত্সাহতি করনি।ি আমরা বসেরকারি উদ্যোগে আফ্রকিাতে জমি লজি নয়িে চাষাবাদরে উদ্যোগ নয়িছে।ি অথচ পাশরে দশেে রয়ছেে প্রচুর অনাবাদি জম।ি ময়িানমার জমি ‘লজি’ দওেয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দখোলওে আমাদরে নীতি প্রণতোরা বষিয়টি নয়িে ভাবনেন।ি এমনকি বসেরকারি উদ্যোক্তাদরেও উত্সাহতি করনেন।ি অতসিম্প্রতি ভারত থকেে তুলা আমদানি নয়িে একটা জটলিতার সৃষ্টি হয়ছেলি। অথচ ময়িানমাররে মন্দালয়-ম্যাগাওয়ে অঞ্চলে প্রচুর তুলা উত্পন্ন হয়। আমরা কখনও ওই তুলার ব্যাপারে আগ্রহ দখোইন।ি এমনকি ওই অঞ্চলে প্রচুর ভুট্টা চাষ হয়। ময়িানমারে প্রচুর গবাদপিশু উত্পাদন হয়, যা কনিা আমাদরে চাহদিা মটোতে পার।ে যৌথভাবে গবাদপিশুর র্ফাম তরৈি করাও সম্ভব। ময়িানমারে প্রচুর বদিশেি র্পযটক আসনে। এরা যাতে বাংলাদশেরে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে আসনে কংিবা সুন্দরবনে এদরে নয়িে যাওয়া যায় কি না, আমাদরে ট্যুর অপারটেররা বষিয়টি ভবেে দখেতে পারনে। কুনমংি-মুস-েঘুমধুম সড়ক আমাদরে জন্য একটি বশিাল সম্ভাবনার সৃষ্টি করতে পার।ে বাংলাদশে আগ্রহ দখেয়িছেে বট,ে কন্তিু তমেন কোনো উদ্যোগ নইে। বাংলাদশেরে সঙ্গে ময়িানমাররে সড়ক যোগাযোগরে জন্য ‘মত্রৈী সড়ক’-এর কাজ শুরু হয়ছেলি বগিত চারদলীয় জোট সরকাররে সময়। ওই সড়কে বশে ক’টি সতেু নর্মিাণ করার কথা, যা কনিা বাংলাদশে নজিরে র্অথায়নে করব।ে কন্তিু এই ‘মত্রৈী সড়ক’-এর কোনো খবর আমরা জানি না। অথচ ভারতকে ট্রানজটি দতিে আমরা অনকে রাস্তা সংস্কার করছে।ি এমনকি ততিাস নদীতে বাঁধ দয়িে ভারতীয় ২৮ চাকার যান চলাচলরে সুযোগ আমরা করে দয়িছে।ি অথচ ‘মত্রৈী সড়ক’ দ্রুত সম্পন্ন করার তমেন কোনো উদ্যোগ আমাদরে নইে। র্অথাত্ বাংলাদশেরে উন্নয়নরে প্রয়োজনে আমরা ময়িানমারকে গুরুত্ব দইিন।ি বাংলাদশে ও ময়িানমার ‘বমিসটকে’-এর সদস্য। ময়িানমাররে সঙ্গে বাংলাদশেরে সর্ম্পক বৃদ্ধি শুধু বাংলাদশেি পণ্যরে বাজারই আসয়িানভুক্ত দশেগুলোর জন্য উন্মুক্ত করবে না, বরং আসয়িানরে সদস্যপদ প্রাপ্তরি ক্ষত্রেে আসয়িানরে ‘ডায়ালগ র্পাটনার’-এর র্মযাদা পতেে সাহায্য করব।ে বলা ভালো, ভারত ইতোমধ্যে ‘ডায়ালগ র্পাটনার’-এর র্মযাদা পয়েছে।ে ময়িানমার আসয়িানরে সভাপতরি দায়ত্বি পতেে যাচ্ছে আগামী বছর। এটাকে গুরুত্বরে সঙ্গে ববিচেনায় নয়িে এবং বাংলাদশেরে জাতীয় র্স্বাথকে প্রাধান্য দয়িে ময়িানমাররে সঙ্গে সর্ম্পক উন্নত করার উদ্যোগ নতিে হবে এখনই। বহর্বিশ্বিে ময়িানমাররে যে ‘বদনাম’ ছলি তা ইতোমধ্যইে কাটয়িে ওঠার উদ্যোগ নয়িছেে ময়িানমার সরকার। গণতন্ত্রী নত্রেী সু চ’ির সঙ্গে প্রসেডিন্টে থইেন সইেন প্রশাসনরে সর্ম্পক এখন ভালো। সু চি উপনর্বিাচনে বজিয়ী হয়ছেনে। জনোরলে সইেন নর্বিাচনরে মধ্য দয়িে ময়িানমারে একটি গণতান্ত্রকি প্রক্রয়িা শুরু করছেনে। ময়িানমাররে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্ররে বরৈী সর্ম্পক আগরে মতো নইে। ময়িানমাররে বপিুল জ্বালানি সম্পদরে সম্ভাবনা র্মাকনি বহুজাতকি সংস্থাগুলোকে ময়িানমাররে ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলছে।ে বলতে বাধা নইে, ময়িানমার আর আগরে অবস্থানে নইে। এখানে ভারতরে ভূমকিাও লক্ষ করার মতো। ভারত তার জাতীয় র্স্বাথরে প্রয়োজনইে ময়িানমার সরকাররে সঙ্গে সর্ম্পক গড়ে তুলছেলি। এ ক্ষত্রেে সু চ’ির গণতান্ত্রকি আন্দোলন কখনই প্রাধান্য পায়ন।ি ভারত বহর্বিশ্বিে সু চ’ির মুক্তরি ব্যাপারওে তমেন কোনো আন্দোলন গড়ে তোলনে।ি ময়িানমার সরকাররে ওপর কোনো ‘প্রশোর’ও সৃষ্টি করনে।ি কনেনা ময়িানমাররে জ্বালানি সম্পদ ভারতীয় নতোদরে কাছে সু চ’ির চয়েে বশেি গুরুত্বর্পূণ ছলি। বাংলাদশে ভারতরে এই ‘অ্যাপ্রোচ’ থকেে শখিতে পারে অনকে কছিু।
ঢাকায় নযিুক্ত নয়া চীনা রাষ্ট্রদূত লি জুন একটি গুরুত্বর্পূণ মন্তব্য করছেলিনে গত ১৯ র্মাচ। তনিি বলছেনে, চীন এ অঞ্চলে র্মাকনি ঘাঁটি মনেে নবেে না। ক্রমর্বধমান ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সর্ম্পকরে পরপ্রিক্ষেতিে এই মন্তব্যরে গুরুত্ব অপরসিীম। এ অঞ্চলে র্মাকনি র্কতৃত্ব ও প্রভাব বাড়ছ।ে র্মাকনি প্যাসফিকি কমান্ডরে আওতাধীন এই অঞ্চল। তথাকথতি ‘সন্ত্রাসী র্কমকাণ্ড’ দমনে এ অঞ্চলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ র্মাকনি সনোর উপস্থতিি রয়ছে,ে যা দৃশ্যমান নয়। তবে যারা নরিাপত্তা নয়িে কাজ করনে, তারা জাননে এ অঞ্চলে র্মাকনি উপস্থতিরি উদ্দশ্যে একটাই-আর তা হচ্ছে ধীরে ধীরে ‘চীনকে ঘরিে ফলো’। যুক্তরাষ্ট্ররে এই স্ট্র্যাটজেি স্নায়ুযুদ্ধকালীন ‘কনটইেনমন্টে পলসি’ির কথাই স্মরণ করয়িে দয়ে। খুব স্বাভাবকিভাবইে চীন এ ধরনরে কোনো চাপরে কাছে নতি স্বীকার করবে না। বাংলাদশে-ভারত সর্ম্পকরে কারণে স্বাভাবকিভাবইে দৃষ্টি এখন বাংলাদশেরে দকি।ে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সামরকি বলয়ে বাংলাদশে যদি প্রবশে কর,ে তা হলে বাংলাদশেরে ভাবর্মূতি নষ্ট হব।ে হলিারি ক্লনিটনরে বাংলাদশে সফররে মধ্য দয়িে এটা স্পষ্ট হয়ে গলে, বাংলাদশে যুক্তরাষ্ট্ররে নতেৃত্বাধীন ভারত-যুক্তরাষ্ট্র অক্ষে প্রবশে করতে যাচ্ছ।ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চীন তথা ময়িানমাররে বরিুদ্ধে একটি ‘ফ্রন্ট’ গড়ে তোলাই হচ্ছে হলিারি ক্লনিটনরে বাংলাদশে সফররে মূল উদ্দশ্যে। বদিশেরে সংবাদপত্র তথা ব্লগে বাংলাদশেরে সম্ভাব্য এই ভূমকিার দকিে ইঙ্গতি করা হয়ছে।ে হলিারি ক্লনিটনরে বাংলাদশে সফর ও ওআইসরি সম্মলেনে ময়িানমাররে বরিুদ্ধে বক্তব্য দওেয়া একই সূত্রে গাঁথা। এতে করে বাংলাদশে লাভবান হবে না। বাংলাদশেরে এই ভূমকিা ময়িানমার খুব ভালো চোখে দখেবে বলওে মনে হয় না। রোহঙ্গিারা আমাদরে জন্য অবশ্যই একটি সমস্যা। নানা সামাজকি সমস্যা তারা সৃষ্টি করছ।ে কন্তিু মজার ব্যাপার হল জাতসিংঘরে শরর্ণাথী বষিয়ক হাইকমশিন (ইউএনএইচসআির) আশগাবাদে যৌথভাবে এই সম্মলেন আয়োজন করলওে অতীতে রোহঙ্গিাদরে প্রত্যার্বতনরে প্রশ্নে ইউএনএইচসআিররে ভূমকিা ইতবিাচক ছলি না। তারা রোহঙ্গিাদরে প্রত্যার্বতনরে বপিক্ষে অবস্থান নয়িছেলি।
‘সফল কূটনীত’ি প্রয়োগে আমাদরে সফলতা খুব বশেি নইে। আমাদরে জন্য যসেব সুযোগরে সৃষ্টি হয়ছে,ে ‘সফল কূটনীত’ির র্ব্যথতার কারণে সইে সুযোগগুলো থকেে আমরা ফায়দা তুলতে পারছি না। ময়িানমাররে সঙ্গে দ্বপিাক্ষকি আলোচনায় রোহঙ্গিা শরর্ণাথী সমস্যার সমাধান করা উচতি ছলি। তা না করে আর্ন্তজাতকি আসরে রোহঙ্গিা প্রশ্নটি তুলে আমরা রোহঙ্গিা সমস্যার সমাধান করতে পারব বলে মনে হয় না। বরং দু’দশেরে মাঝে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হতে বাধ্য। ময়িানমার যখন ‘উন্মুক্ত’ হয়ে যাচ্ছ,ে ঠকি তখনই রোহঙ্গিা প্রশ্নটি আর্ন্তজাতকিীকরণরে মধ্য দয়িে আমরা একটা ভুল সগিন্যাল পৌঁছে দলিাম। এতে করে আমাদরে জাতীয় র্স্বাথ রক্ষতি হবে না।
লখেক : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বশ্বিবদ্যিালয়
ঃংৎধযসধহনফ(ধ)ুধযড়ড়.পড়স

বুধবার, ৯ মে, ২০১২

হিলারির সফর : একটি মূল্যায়ন





তারেক শামসুর রেহমান
এক ঝটিকা সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন হিলারি ক্লিনটন। বাংলাদেশটা তার একেবারে অপরিচিত নয়। এর আগেও তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। তবে অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নয়। বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণের বিকাশ, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার সখ্য, বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি নানা বিষয় হিলারি ক্লিনটনকে আগ্রহান্বিত করে তুলেছিল। এর প্রমাণও তিনি দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ না হলেও ড. ইউনূসের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়েছে। দীর্ঘ কথাও হয়েছে। তবে এবার হিলারি ক্লিনটনের বাংলাদেশ সফরের প্রেক্ষাপট ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিভিন্ন কারণে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের কাছে বাংলাদেশের গুর“ত্ব এ মুহূর্তে অনেক বেশি। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত-যুক্তরাষ্ট্র অক্ষ, ভারত মহাসাগরে চীনা নৌবাহিনীর উপ¯ি’তি বেড়ে যাওয়া, মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুর“ হওয়া, ২০১৪ সালে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করা, ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতি হওয়া ইত্যাদি নানা বিষয় যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের কাছে বাংলাদেশের গুর“ত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। নিছক প্রটোকল রক্ষার্থে হিলারি ক্লিনটন বাংলাদেশে এসেছেন, এটা আমি মনে করি না। বরং দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন নীতিতে যে পরিবর্তন আসছে, সেই পরিবর্তনের আলোকেই এই সফরকে বিশ্লেষণ করতে হবে।
প্রশ্ন হ”েছ, এই সফরে বাংলাদেশের প্রাপ্তি কী? বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের আলোকে এ সফর থেকে আমরা কতটুকু সুবিধা আদায় করে নিতে পেরেছি? যৌথ সংবাদ সম্মেলনে হিলারি ক্লিনটনের দেয়া বক্তব্য থেকে যে বিষয়গুলো বেরিয়ে এসেছে, তাতে বাংলাদেশের প্রাপ্তি যে খুব বেশি, তা আমার কাছে মনে হয়নি। প্রথমত, একটি যৌথ অংশীদারিত্বের চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দু’দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সচিব পর্যায়ে বছরে একবার সংলাপ হবে। এ ধরনের সংলাপ অতীতে হলেও এবার এর একটি আইনি কাঠামো দেয়া হল। প্রশ্ন হ”েছ, এই ‘সংলাপে’র মধ্য দিয়ে কি আমরা আমাদের জাতীয় স্বার্থ আদায় করে নিতে পারব? নাকি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থটা এখানে বেশি? চুক্তিতে সন্ত্রাসের বির“দ্ধে লড়াই, সহিংস চরমপš’া এবং মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান আর জলদস্যুতার মতো আন্তঃদেশীয় অপরাধ রোধ ও নিরাপত্তা সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। এ ধরনের নানা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ হতে পারে। যা আশংকা করা হ”েছ তা হ”েছ, ভবিষ্যতে তথাকথিত ‘সন্ত্রাসবাদ রোধে সহযোগিতা’র আলোকে বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যেভাবেই হোক, মার্কিন সেনা মোতায়েন হবে কিনা? যে ‘অংশীদারি সংলাপে’র কথা বলা হ”েছ, তা এ দিকটা নির্দেশ করে কিনা? অনেকের মনে থাকার কথা, গত ২ মার্চ সিনেটের এক অধিবেশনে যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক ফ্লিটের (বাংলাদেশ প্যাসিফিক ফ্লিটের অন্তর্ভুক্ত) কমান্ডার রবার্ট উইলার্ড বলেছিলেন, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার ৫টি দেশে যুক্তরাষ্ট্রের ‘বিশেষ বাহিনী’ মোতায়েন রয়েছে। যদিও ঢাকার মার্কিন দূতাবাস পরে এর একটি ব্যাখ্যাও দিয়েছিল।
আসলে বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ রয়েছে নানা কারণে। ভারতীয় মহাসাগরে চীনা নৌবাহিনীর শক্তিশালী উপ¯ি’তি, যা মার্কিন তথা ভারতীয় স্বার্থকে আঘাত করছে, এটা পেন্টাগনের উদ্বেগের অন্যতম কারণ। অন্যদিকে মিয়ানমার এখন অনেকটা ‘উš§ুক্ত’ হয়ে যা”েছ। অং সান সু চি সংসদে গেছেন। সু চিকে ভবিষ্যতে ক্ষমতায় বসানো এবং মিয়ানমারে তাদের উপ¯ি’তি বাড়িয়ে চীনকে ঘিরে ফেলার মার্কিন নীতিতে বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করতে যা”েছ কিনা, সেটাই বড় প্রশ্ন এখন। যদিও এটা ঠিক যে যুক্তরাষ্ট্র চায় না বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠুক। বাংলাদেশকে তারা একটি মডারেট মুসলিম দেশ হিসেবেই মনে করে। জঙ্গিবাদকে যুক্তরাষ্ট্রের বড় ভয়। প্রায় ৪ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করেও আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র বড় ধরনের ব্যর্থতা স্বীকার করে ২০১৪ সালে সেখান থেকে সব সৈন্য প্রত্যাহার করে নিতে যা”েছ। এমনই এক পরি¯ি’তিতে দক্ষিণ এশিয়া, ‘হর্ন অব আফ্রিকা’ কিংবা মধ্যপ্রাচ্যে জঙ্গিবাদ বিকশিত হোক, এটা যুক্তরাষ্ট্র কখনও চাইবে না। আমেরিকা-বাংলাদেশ অংশীদারিত্ব চুক্তি এ লক্ষ্যেই স্বাক্ষরিত হ”েছ কিনা, এটাই বড় প্রশ্ন এখন। ভুলে গেলে চলবে না, দক্ষিণ এশিয়ার গুর“ত্ব মার্কিনিদের কাছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। অতি সম্প্রতি এডমিরাল জেমস স্টাভরিডিস মার্কিন বাহিনীর ‘ভড়ৎধিৎফ ঢ়ৎবংবহপব’-এর কথা বলেছেন। এডমিরাল স্টাভরিডিস যুক্তরাষ্ট্রের ঊটঈঙগ (টহরঃবফ ঝঃধঃবং ঊঁৎড়ঢ়বধহ ঈড়সসধহফ)-এর প্রধান। স্টাভরিডিস দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য তথা আফ্রিকাতে মার্কিন বাহিনীর উপ¯ি’তির প্রয়োজনীয়তার কথাই বোঝাতে চেয়েছেন। এখন দেখার বিষয় যুক্তরাষ্ট্র এ চুক্তিটিকে কিভাবে ব্যবহার করে। এখান থেকে আমাদের পাওয়ার কিছু নেই।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের যে সুযোগ চেয়েছিল তা পায়নি। বাংলাদেশকে তার তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে যে শুল্ক দিতে হয়, তাতে করে প্রতিযোগিতায় আমরা টিকতে পারছি না। অথচ এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) দেশ হিসেবে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের সুযোগ আমাদের পাওয়ার কথা। তৃতীয়ত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সাহায্য সং¯’া ‘মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ কর্পোরেশন’ (এমসিপি) থেকে বাংলাদেশ কোন সাহায্য পা”েছ না। এ ব্যাপারে হিলারি ক্লিনটনের কোন বক্তব্য বা সহযোগিতার আশ্বাস আমরা পাইনি। চতুর্থত, মিসেস ক্লিনটন ‘গণতন্ত্রের জন্য সংলাপ’ ও ‘পার্লামেন্টারি ডিবেটে’র কথা বলেছেন। এগুলো হ”েছ তত্ত্বের কথা। আমরা সবাই জানি, গণতন্ত্রে সরকার ও বিরোধী দলের মাঝে সংলাপ ছাড়া কোন বিকল্প নেই। পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস ও আ¯’া রাখা যে জর“রিÑ এ কথাটা আমরা বারবার বলে আসছি। কিš‘ এই ‘সংলাপ’ বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়নি। এমনকি সংসদীয় ডিবেটও তেমন কার্যকর নয়। এখন হিলারি ক্লিনটনের মুখ থেকে এ কথাটি বেরিয়ে এসেছে সত্য। কিš‘ আদৌ ‘সংলাপ’ অনুষ্ঠিত হবে, এ আ¯’াটা রাখতে পারছি না। হিলারি ক্লিনটনের বক্তব্যের একটা খারাপ দিক হ”েছ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘নাক গলানো’। ভারত কিংবা অন্য কোন দেশের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এমনটা করে না। আমরা এমন একটা ‘ক্ষেত্র’ তৈরি করেছি, যেখানে বিদেশীরা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করছে। পঞ্চমত, বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী ও শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামের অন্তর্ধান নিয়ে হিলারি ক্লিনটনের মন্তব্য, হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য তদন্তের যে অভিমত হিলারি দিয়েছেন, সরকার এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিলে ভালো করবে।
হিলারি ক্লিনটন তার বক্তব্য ও চুক্তিতে মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা, শক্তিশালী সুশীল সমাজ, এনজিওর ভূমিকা, খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তনে সহযোগিতা, মাতৃ ও শিশু স্বা¯’্য, পরিবার পরিকল্পনা কিংবা হরতালের ক্ষতিকর দিক এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার যে কথা বলেছেন, তার মাঝে নতুনত্ব কিছু নেই। যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতিতে এসব প্রতিফলিত হয়। গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, নারীর ক্ষমতায়নের কথা যুক্তরাষ্ট্র বলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্র বিনির্মাণের সমস্যাটা মানবিক। রাজনীতিকদের মানসিকতায় যদি পরিবর্তন না হয়, তাহলে এ দেশে সা”চা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে না। আর সুশীল সমাজের ভূমিকা নিয়েও কথা আছে। ওয়ান-ইলেভেনে সুশীল সমাজের ভূমিকা তাদের বিতর্কিত করেছে।
আমরা হিলারি ক্লিনটনের সফরকে বেশি করে গুর“ত্ব দিয়েছি। ক্লিনটনের সঙ্গে মমতা ব্যার্নাজির বৈঠকেও আমরা আশান্বিত হয়েছিলাম যে, তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে হিলারি কথা বলবেন। কিš‘ সেটা হয়নি। আমরা ভুলে গেছি, এটা যুক্তরাষ্ট্রের নীতি নয়। দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের ব্যাপারে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র কখনও হস্তক্ষেপ করে না। হিলারির এ সফরে আমাদের প্রাপ্তি খুব বেশি নয়। এতে করে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কটা আরও ‘একটু উন্নত’ হল মাত্র। তবে মূল বিষয় যেটি তা হ”েছ ‘যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অংশীদারিত্ব চুক্তি’ বা সংলাপ তৃতীয় কোন দেশের (চীন) বির“দ্ধে ব্যবহƒত হয় কিনা, তা দেখা। আগামী দিনগুলোই বলতে পারবে আমরা এই চুক্তি থেকে কতটুকু উপকৃত হব।
ড. তারেক শামসুর রেহমান : প্রফেসর, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
ঃংৎধযসধহনফ@ুধযড়ড়.পড়স

সোমবার, ৭ মে, ২০১২

যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক



তা রে ক  শা ম সু র  রে হ মা ন
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র সচিব ও সাবেক ফার্স্টলেডি হিলারি ক্লিনটনের বাংলাদেশ সফর ও বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়াশিংটনের যৌথ অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর এটা স্পষ্ট করেই বলা যায়, এই দেশ দুটির মাঝে সম্পর্ক এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছল। একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এই চুক্তিটি করা হয়েছে বলা হলেও, চুক্তিটি আদৌ কোনো তৃতীয় দেশ, বিশেষ করে চীনের বিরুদ্ধে ব্যবহার হবে কি না, সেটা একটা বড় প্রশ্ন এখন। যদিও যুক্তরাষ্ট্র অনেক দেশের সঙ্গেই এ ধরনের চুক্তি করে। গেল সপ্তাহে হঠাত্ করেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা কাবুলে গিয়েছিলেন। সেখানেও তিনি এ ধরনের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। তবে এ ধরনের একটি চুক্তি বাংলাদেশকে মার্কিন প্রভাববলয়ে নিয়ে যাবে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সঙ্গে এ ধরনের একটি অংশীদারিত্ব চুক্তি বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত অক্ষে নিয়ে যাবে।
মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির আলোকে বাংলাদেশ খুব গুরুত্বপূর্ণ না-হলেও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা গুরুত্ব দেয়। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতকেন্দ্রিক যুক্তরাষ্ট্রের যে নীতি, তাতে বাংলাদেশের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ এশিয়া তথা ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র তার উপস্থিতি বাড়াতে চায়। যেহেতু এ অঞ্চলে ভারত একটি শক্তি, সেহেতু ভারতকে সঙ্গে নিয়েই যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে তার প্রভাব বৃদ্ধি করছে। বাংলাদেশের ভূ-কৌশলগত অবস্থানের কারণে মার্কিন নীতিনির্ধারক, বিশেষ করে সামরিক নীতিনির্ধারকদের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। অতিসম্প্রতি ভারত-বাংলাদেশ কৌশলগত সম্পর্ক বৃদ্ধি পাওয়ায় মার্কিন নীতিনির্ধারকদের আগ্রহটা আরও বেড়েছে। সে কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ-ভারত-যুক্তরাষ্ট্র একটি অক্ষ গড়ে উঠেছে। একদিকে ২০১৪ সালে আফগানিস্তান থেকে সকল মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের ফলে সেখানে যে ‘শূন্যতার’ সৃষ্টি হবে, মার্কিন নীতিনির্ধারকরা মনে করেন সেই ‘শূন্যতা’ পূরণ হতে পারে ভারতকে দিয়ে, যা চূড়ান্ত বিচারে তার স্বার্থকে রক্ষা করবে। লক্ষ করলে দেখা যাবে আফগানিস্তানে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে ভারত, যার পরিমাণ কয়েক বিলিয়ন ডলার। ভারত সেখানে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ করছে। প্রচুর হাইওয়ে তৈরি করছে ভারত। এখানে সীমান্তবর্তী পাকিস্তান বরারবই উপেক্ষিত থেকেছে। আর ভারতের এই বিনিয়োগ সম্ভব হয়েছে মার্কিন নীতিনির্ধারকের সম্মতি দেওয়ার পরই। ধারণা করছি, ২০১৪ সালে মার্কিন বাহিনী সেখান থেকে প্রত্যাহার করা হলে ভারতের তথাকথিত একটি ‘শান্তিরক্ষী’ বাহিনী সেখানে অবস্থান নেবে। অথবা ন্যাটোর একটি এশীয় সংস্করণ দেখতে পারি আমরা ওই সময়, যেখানে ভারতের একটি অংশগ্রহণ থাকবে। ১৯৪৯ সালে ন্যাটো যখন গঠিত হয়েছিল, তার প্রথম এবং একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল এই বাহিনী শুধু ইউরোপেই নিয়োজিত থাকবে। ন্যাটোর উদ্দেশ্য ছিল সম্ভাব্য সোভিয়েত আগ্রাসন থেকে ‘ইউরোপের গণতন্ত্র’কে রক্ষা করা। ন্যাটোর সেই ধ্যান-ধারণায় পরিবর্তন এসেছে। প্রথমবারের মতো আফগান যুদ্ধে ন্যাটো বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। যেহেতু ন্যাটোর ইউরোপীয় মিত্ররা আর আফগানিস্তানে ‘ঝুঁকি’ নিতে চাচ্ছে না, সেহেতু এ অঞ্চলকে ঘিরে ন্যাটোর এশীয় সংস্করণ (সেটা ভিন্ন নামেও হতে পারে) হবে এবং ভারত তাতে একটি বড় ভূমিকা পালন করবে। এই ‘প্রক্রিয়া’য় বাংলাদেশও জড়িত হবে। মার্কিন নীতিনির্ধারকদের সুবিধা এখানেই যে বাংলাদেশ সরকার ‘ভারতের এই ভূমিকা’কে যা যুক্তরাষ্ট্র চাইছে, সমর্থন করছে। সূক্ষ্মভাবে লক্ষ করলে আরও দেখা যাবে, অতিসম্প্রতি ভারত পারমাণবিক অস্ত্র বহনযোগ্য যে মিসাইল ক্ষেপণাস্ত্র (অগ্নি-৫) সাফল্যের সঙ্গে উেক্ষপণ করেছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রচ্ছন্ন সমর্থন ছিল। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র নীতির ব্যাপারে যে নীতি গ্রহণ করেছে, ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র নীতির ব্যাপারে তার সেই নীতি পরস্পরবিরোধী। উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র যেখানে তার মিত্র দেশগুলোকে ব্যবহার করছে, সেখানে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের বিরুদ্ধে এই কাজটি করছে না। বরং ভারতকে সব ধরনের সাহায্য ও সহযোগিতা করেছে, এই কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যেতে। অনেকেরই স্মরণ থাকার কথা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের যে পারমাণবিক চুক্তি রয়েছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে অত্যাধুনিক পারমাণবিক প্রযুক্তি সরবরাহ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য হচ্ছে একটাই-আর তা হচ্ছে চীনের বিরুদ্ধে ভারতকে একটি শক্তি হিসেবে দাঁড় করানো। নানা কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। বেশ ক’টি ইস্যুতে দেশ দুটির মধ্যে মতপার্থক্য রয়ে গেছে। বাংলাদেশ সফর করার আগে হিলারি ক্লিনটন বেইজিংও সফর করেছেন। সেখানে চীনা নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তার আলোচনা সফল হয়নি। চীনের সমরসজ্জা বৃদ্ধি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য চিন্তার একটি কারণ। চীন যাতে শক্তিশালী হয়ে উঠতে না পারে সেজন্য ভারতকে চীনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা।
চীন ইতোমধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া তথা ভারত মহাসাগরে অন্যতম নৌশক্তিরূপে আবির্ভূত হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে আঘাত করছে। এটাকে বিবেচনায় নিয়েই গড়ে উঠছে ভারত যুক্তরাষ্ট্র অক্ষ, যে অক্ষে বাংলাদেশও একটি অংশ। যুক্তরাষ্ট্রের এই স্ট্র্যাটেজি বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকের শেষের দিকে গড়ে ওঠা ‘ঈড়হঃধরহঃসবহঃ ঞযবড়ত্ু’র কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নকে ঘিরে রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এই নীতি অবলম্বন করেছিল। এ কারণে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন। বাংলাদেশের সীমান্তে রয়েছে মিয়ানমার, যে দেশটির সঙ্গে চীনের কৌশলগত সামরিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। চীনের সীমান্তবর্তী দেশ হচ্ছে মিয়ানমার। মিয়ানমারে গণতন্ত্রের হাওয়া বইছে। সু চি এখন সংসদ সদস্য। অনেক পশ্চিমা দেশ এখন মিয়ানমারের ওপর থেকে অর্থনৈতিক অবরোধ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। জেনারেল সেইন এখন তার সরকারকে একটি ‘বেসামরিক অবয়ব’ দিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্র চাইবে বাংলাদেশ ও ভারতকে সঙ্গে নিয়ে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে। এমনকি ভবিষ্যতে এ অঞ্চলে মার্কিন সেনাবাহিনী মোতায়েনের সম্ভাবনার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অতিসম্প্রতি, বিশেষ করে গেল ফেব্রুয়ারি থেকে গত ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বাংলাদেশ সফর করেছেন। ফেব্রুয়ারিতে এসেছিলেন মারিয়া ওটেরো (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি,  গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয় সম্পর্কিত ডেস্ক), রবার্ট ও’ব্লেক (সহকারী পররাষ্ট্র সচিব, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া ডেস্ক), ভেন্ডি শেরম্যান (আন্ডার সেক্রেটারি, রাজনৈতিক বিষয়াদি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়)। গত ১৯ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে নিরাপত্তা শীর্ষক একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব দেন সহকারী পররাষ্ট্র সচিব (রাজনৈতিক বিষয়াদি) আন্দ্রে শাপিরো। অত্যন্ত গোপনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে কোন কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিংবা কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা সংবাদপত্রে জানানো হয়নি। নিরাপত্তা বিষয়ের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দু’দেশ আলোচনা করল কিন্তু জাতি তা জানল না। গোপনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত গোপনই রাখা হল। এ নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের কোনো মন্তব্যও আমার চোখে পড়েনি। তবে বাংলাদেশে মার্কিন সেনা মোতায়েনের একটি সম্ভাবনা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা হচ্ছে। অনেকেরই মনে থাকার কথা গত ২ মার্চ সিনেটের এক অধিবেশনে যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক ফ্লিটের (বাংলাদেশ এর অন্তর্ভুক্ত) কমান্ডার অ্যাডমিরাল রবার্ট উইলার্ড বলেছিলেন বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচটি দেশে যুক্তরাষ্ট্রের ‘বিশেষ বাহিনী’ মোতায়েন রয়েছে। এটি নিয়ে বাংলাদেশে গুজবের সৃষ্টি হলে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মজিনা এর একটি ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন কিছু সেনা রয়েছে, যারা বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট বাহিনীকে প্রশিক্ষণের জন্য আসে, আবার চলেও যায়। পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা ‘তথাকথিত সন্ত্রাসীদের মোকাবেলার’ জন্য (?) ভিন্ন নামে ও ভিন্ন পরিচয়ে মার্কিন বিশেষ বাহিনীর লোকজন বাংলাদেশে রয়েছে। এর একটা আইনি কাঠামো দেওয়ার জন্যই ওই নিরাপত্তা শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সরকারিভাবে যুক্তরাষ্ট্র এখনও স্বীকার করে না যে বাংলাদেশে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য রয়েছে। তবে ভারত তা মনে করে। এ কারণেই ভারতের পক্ষ থেকে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সামরিক জোট গঠনের সম্ভাবনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। ‘সন্ত্রাসীদের’ কথা বলা হলেও মূল টার্গেট মূলত চীন। চীনকে  পেছনে ফেলা। তবে হিলারি ক্লিনটনের সফরের সময় এ বিষয়টি আলোচিত হয়নি। বাংলাদেশে মার্কিন আইওসির (তেল ও গ্যাস সংস্থা) যথেষ্ট স্বার্থ রয়েছে। শেভরনের বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার। শেভরন বর্তমানে জালালাবাদ, মৌলভীবাজার ও বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ডে কাজ করছে। বাংলাদেশে উত্পাদিত গ্যাসের শতকরা ৫০ ভাগ শেভরন একাই উত্পাদন করে। বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ডে তাদের কর্মকাণ্ডে স্থানীয় জনগণ অসন্তুষ্ট। সেখানে বিক্ষোভ হয়েছে। এখন কনোকো ফিলিপ চাইছে গভীর সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন করতে। হিলারি ক্লিনটন পরোক্ষভাবে এটা নিয়েও তদবির করেছেন। বহুল  আলোচিত ও বিতর্কিত ‘টিফা’ চুক্তি নিয়েও কথা হয়েছে। যদিও বাংলাদেশ টিফা নয়, বরং টিআইসিএফ বা ‘ট্রেড অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন ফোরাম’ নামে একটি চুক্তি করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। তবে মন্ত্রিসভায় এখনও তা উত্থাপিত হয়নি। যে নামেই চুক্তিটি হোক, তাতে বাংলাদেশের লাভের সম্ভাবনা কম। এ ধরনের চুক্তি হলে বাংলাদেশ কোনো পাইরেটেড পণ্য বাজারজাত করতে পারবে না। ওষুধ শিল্পও হুমকির মুখে পড়বে। মিসেস ক্লিনটনের সফরের সময় টিআইসিএফ চুক্তিটি চূড়ান্ত হয়েছে। বাংলাদেশে ‘গুম’জনিত পরিস্থিতি নিয়ে হিলারি ক্লিনটন মন্তব্য করেছেন, যা বেশ গুরুত্বের দাবি রাখে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সাম্প্রতিক মন্তব্যের পর যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের পক্ষ থেকে ‘গুম’-এর বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। হিলারি ক্লিনটনের এই সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ কতটুকু উপকৃত হবে বলা মুশকিল। তবে বাংলাদেশে যে মার্কিনি প্রভাব বাড়বে, তা বলার  অপেক্ষা রাখে না। এখন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তাবলয়ে বাংলাদেশের সম্ভাব্য অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ কতটুকু রক্ষিত হবে, তা শুধু আগামী দিনগুলোই বলতে পারবে।
লেখক : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
tsrahmanbd(a)gmail.com